দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত হয়ে মানুষ গড়ার অমূল্য দায়িত্ব পালন করছেন উখিয়ার ইনানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এখলাসুর রহমান।
তার কাছে পাঠ নেওয়া অনেকেই এখন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, আক্ষেপের সুরে এই শিক্ষক জানালেন সরকারি সেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতিতে মোড়া এক বিড়ম্বনার গল্প।
মাত্র ৩০ হাজার টাকার একটি বিল পাশে ঘুষ প্রদানে বিলম্ব হওয়ায় এখলাসুর রহমানকে বিড়ম্বনায় ফেলে দেন উখিয়া হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়োজিত অডিটর রুবেল দে।
ঘুষ দিতে অপারগতা স্বত্ত্বেও বাধ্য হয়ে বিল পাশের জন্য রুবেলকে তার দাবী করা টাকা দিতে হয়েছে বলে জানান এই শিক্ষক।
এখলাসুর রহমান বলেন, ” আগে টাকা, পরে কাজ! এমন নীতিতে অভ্যস্ত অডিটর রুবেল। মাত্র ৩০ হাজার টাকার বিলের জন্য অনেকদিন ঘুরিয়েছে সে, অথচ তার মত হাজার জনকে আমি পড়িয়েছি। নির্লজ্জের মতো সে ঘুষ নিয়েছে আমার কাছে।”
বেতন ভাতা, পেনশন সহ সরকারি সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিল উত্তোলন সহ যেকোনো প্রয়োজনে সেবা নিতে গেলে সেবাগ্রহীতাদের কাছে শতাংশ হারে নিজের পাশাপাশি অফিসের বড়কর্তার নাম করে রুবেল ঘুষ চান বলে অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর উখিয়ায় সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে গত ২০ মে যোগদান করেন জি এম মুক্তাদির। ৪১ তম বিসিএসের এই কর্মকর্তা বর্তমানে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন, উখিয়ায় যোগদানের ৫ মাস অতিবাহিত হলেও নিজের প্রাপ্য বেতন নিয়ে জটিলতা পোহাতে হয়েছে তাকে।
বেতন ছাড়ের ক্ষেত্রে নানা অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে কালক্ষেপন করে অডিটর রুবেল তাকে ভোগান্তিতে ফেলেছেন বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
দি বাংলাদেশ সার্ভিস ( রিক্রিয়েশন এলাউন্স) বিধিমালা ১৯৭৯ অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের যেকোনো সরকারি কর্মচারী প্রতি তিনবছর অন্তর ছুটি পাওনা সাপেক্ষে নূন্যতম ১৫ দিনের অর্জিত ছুটি সহ তার নির্ধারিত বেতন স্কেল হারে এক মাসের সমপরিমাণ অর্থ শ্রান্তি ও বিনোদন ভাতা হিসেবে পেয়ে থাকেন।
এই ভাতাটি প্রাপ্যের যোগ্য উখিয়ায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিতই রুবেলের কাছে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
সম্প্রতি উখিয়ার একটি সরকারি দপ্তরের ৪
কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শ্রান্তি ও বিনোদন ভাতা গ্রহণ করতে গিয়ে রুবেলকে দিতে হয়েছে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ।
অনুসন্ধান বলছে, মহেশখালীর বাসিন্দা রুবেল মাত্র ১ বছর আগে পেকুয়া থেকে উখিয়ায় বদলী হয়ে আসেন। উখিয়ায় চাকরির বিধি তোয়াক্কা না করে গত ৫ বছর ধরে (২০১৯ থেকে) হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার চেয়ার ধরে রাখা স্থানীয় বাসিন্দা আলী আহমদ অনিকই অডিটর রুবেলের বেপরোয়া হয়ে উঠার নেপথ্যের কারণ বলে জানা গেছে।
“আলীর প্রশ্রয়ে রুবেল যা খুশি তাই করতে পারেন, কারণ দিনশেষে আলীর কাছেই যায় রুবেলের আদায় করা ঘুষের বড় অংশ।”- কথাগুলো বলছিলেন উখিয়ার অন্য একটি সরকারি দপ্তর থেকে অবসরে যাওয়া এক কর্মকর্তা।
কিছু দিন আগে জনৈক এই কর্মকর্তা অবসরে গিয়েছেন, তাকে পেনশন পেতে বারবার দারস্থ হতে হচ্ছে উখিয়া হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে।
অনিয়মতান্ত্রিকভাবে অযুহাত তৈরি করার মাধ্যমে আলী ও রুবেল মিলে তার সাথে অগ্রহণযোগ্য আচরণ করে পেনশন ছাড়ে বিলম্ব করছেন , এমন অভিযোগ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন তিনি। নিরাপত্তার স্বার্থে ঐ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদককে এই তথ্য দিয়েছেন।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন বলেন, ” হিসাবরক্ষণ কার্যালয় উপজেলা প্রশাসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি দপ্তর, যেখানে অনিয়ম – দুর্নীতির প্রশ্ন উঠা আসলে কাম্য নয়। যদি অসাধুভাবে অর্থ আয়ে কেউ জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তর অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে কার্পণ্য করবে না বলে মনে করি। ”
রুবেলের প্রসঙ্গে তার উর্ধ্বতন উখিয়া উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আলী আহমদ অনিক বলেন, ” ঘুষ নেওয়ার বিধান নেই। যদি সে (রুবেল) তা করে থাকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নিয়ে আসুন। “একপ্রকার রুবেলের পক্ষে সাফাই গেয়েই মুঠোফোনের কল রেখে দিন তিনি।
অনিয়মের প্রশ্নে রুবেল শুরুতেই জবাব দেন, ইম্পসিবল! প্রশ্নই আসেনা। তিনি বলেন, ” টাকা ছাড়া চাকরি নিয়েছি। এক বন্ধুর কাছে গাড়ী ভাড়া নিয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম সেই টাকা প্রথম মাসের বেতন থেকে ফেরত দিয়েছি। ”
ঘুষ আদান-প্রদান নিয়ে আনিত সব অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
সূত্র : সকালের কক্সবাজার
পাঠকের মতামত